শামীম রহমান—একটি ছোট্ট শহর সৈয়দপুর থেকে শুরু করে ঢাকার ব্যস্ত মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রি এবং সেখান থেকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিজের নাম প্রতিষ্ঠা করা এক উদ্যমী তরুণের গল্প।
শামীম রহমানের জন্ম ও বেড়ে ওঠা সৈয়দপুরে। ২০০৯ সালে বন্ধুদের সঙ্গে শখের বসে গিটার বাজানো শুরু করেন। ২০১১ সালে ছোট দুই ভাই ফয়সাল ও রাফিকে নিয়ে “কিং পার্ক” নামে একটি ব্যান্ড গড়ে তোলেন এবং স্থানীয় কিছু কনসার্টে অংশ নেন। শামীমের আগ্রহের আরেকটি দিক ছিল ফটোগ্রাফি। মোবাইল ফোন দিয়ে শুরু হলেও তিনি পরবর্তী সময়ে ধার করা টাকায় একটি ক্যামেরা কিনে ফটোগ্রাফিতে পা রাখেন।
ক্যামেরা হাতে তিনি আশপাশের বিভিন্ন জায়গায় ছবি তুলতে বেরিয়ে পড়তেন। অর্থের প্রয়োজন মেটাতে স্বল্পমূল্যে ছবি তোলা এবং ওয়েডিং ফটোগ্রাফিও করতেন। ২০১৭ সালে তার ফটোগ্রাফি প্রতিভা স্বীকৃতি পায়, যখন তিনি গ্রামীণফোন ওয়াও বক্স ফটোগ্রাফি অ্যাওয়ার্ড অর্জন করেন।
শামীম রহমান শুধুমাত্র স্থিরচিত্রে থেমে থাকেননি। তিনি শর্টফিল্ম এবং মিউজিক ভিডিও এডিটিংয়ে দক্ষতা অর্জন করেন। নিজের পুরনো কম্পিউটারে বিভিন্ন প্রজেক্টের এডিটিং করতেন তিনি। ২০১৮ সালে মাবরুর রশিদ বান্নাহর কাছে একটি শর্টফিল্মের ট্রেলার পাঠানোর পর তার দক্ষতা নজরে আসে। এরপর ঢাকায় এসে ইউসিএফ প্রোডাকশন হাউজে এডিটর হিসেবে কাজ শুরু করেন তিনি।
২০১৯ সালে শুরু হওয়া এই যাত্রায় শামীম রহমান নিজের মেধা ও পরিশ্রম দিয়ে খুব দ্রুতই শীর্ষস্থান অর্জন করেন। তিনি এখন ইউসিএফ প্রোডাকশনের চিফ এডিটর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন এবং পাশাপাশি নিজের পোস্ট-প্রোডাকশন কোম্পানি “কিং পার্ক” চালু করেছেন। ইতোমধ্যে তিনি ১০০টিরও বেশি নাটক ও ওয়েব সিরিজ এডিট করে একটি মাইলফলক স্পর্শ করেছেন।
২০২২ সালে শামীম রহমান তার এডিট করা সিনেমা “মায়ের ডাক” এর জন্য নেক্সজেন ইন্টারন্যাশনাল শর্টফিল্ম অ্যাওয়ার্ডে সেরা এডিটরের পুরস্কার অর্জন করেন। শুধু দেশেই নয়, ভারতের দক্ষিণী শর্টফিল্ম ‘প্রিজন’, ‘চেজিং ড্রিমস’, এবং ‘শায়ন্তীনী’র মতো চলচ্চিত্রেও তার এডিটিং দক্ষতার ছাপ রয়েছে।
শামীম রহমানের যাত্রা প্রমাণ করে, মেধা ও কঠোর পরিশ্রম কখনও বিফলে যায় না। সৈয়দপুরের মতো ছোট শহর থেকে শুরু করে ঢাকার মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রি এবং সেখান থেকে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে জায়গা করে নেওয়া শামীম এখন তরুণদের জন্য একটি বড় অনুপ্রেরণার নাম।
তাঁর গল্প আমাদের শেখায় যে প্রতিকূলতা জয় করেই সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছানো সম্ভব, যদি থাকে আত্মবিশ্বাস আর অদম্য ইচ্ছাশক্তি।
Thank You The Bangladesh Story